Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter
Follow palashbiswaskl on Twitter

Tuesday, February 19, 2013

শাহবাগের সমাবেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা।শাহবাগ প্রাঙ্গণের চেতনায় চুরমার জামাতের হরতাল

 শাহবাগের সমাবেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা।

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এরই মধ্যে তিনটি গান বেঁধেছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের কবীর সুমন। এগুলোর শিরোনাম 'গণদাবি', 'শাহবাগে রাতভোর' ও 'তিন মিনিট'। এবার ঘাতকের আঘাতে নিহত শহীদ রাজীব হায়দারকে নিয়ে আরো একটি গান বেঁধেছেন এই গায়ক। গানটির শিরোনাম 'শহীদ রাজীব'। গতকাল সকালে নিজের ওয়েবসাইটে গানটি পোস্ট করেন কবীর সুমন। গানটি প্রসঙ্গে তিনি ওয়েবসাইটে লেখেন 'বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের হাতে নিহত শহীদ রাজীব হায়দারকে নিয়ে এই গান। শাহবাগের গণ-আন্দোলনের সাহসী এই যোদ্ধা মাত্র ৩৫ বছর বয়সে শহীদ হলেন। সে আমার ছেলের বয়সী। গানটির মধ্য দিয়ে আমি নিজের দুঃখবোধ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।' গানটির মুখ_'কী বলব আজ কাকে, কোন সান্ত্বনা দেব/এত দূর থাকি কী করে যে বলব খুনির খবর নেব। কী বলব বন্ধুদের কিসের অভয় দেব/এত দূরে থাকি কী করে বলব আমি প্রতিশোধ নেব।'

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ২শ' শিক্ষক।গণজাগরণ মঞ্চে চলমান আন্দোলনের ১৪তম দিনে সোমবার তারা সংহতি প্রকাশ করেন।

 

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, "আমরা রাজাকারদের ফাঁসি ছাড়া অন্য কিছু চাই না। আপনারা আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন সে পথে আমরাও হাঁটব। যতদিন এ আন্দোলন চলবে ততদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের সাথে থাকবে।"

 

এ সময় তিনি, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে জামায়াতের সকল প্রতিষ্ঠান ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

 

এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে রাজীবসহ যে তিনজন শহীদ হয়েছেন তাদের ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণজাগরণ চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

 

সোমবার বেলা ১১টায় নির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাচ ধারণ করা হয়। কালো পতাকা উত্তোলন শেষে আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।


...................

রাজধানী শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী কবীর সুমন 'গণদাবি', 'শাহবাগে রাতভোর' ও 'তিন মিনিট' শিরোনামের গান লিখেছেন। তিনটি গানই শ্রোতামহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

 

শুক্রবার প্রজন্ম চত্বরের অন্যতম সৈনিক ব্লগার ও স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনা শোনার পরপরই কবীর সুমন নিহত ব্লগার রাজীবকে নিয়ে 'শহীদ রাজীব' শিরোনামে আরেকটি গান তৈরি করেছেন।

 

রোববার সকালে গানটি তিনি তার ওয়েবসাইটে পোস্ট করেছেন। এ প্রসঙ্গে সুমন তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুদের হাতে নিহত শহীদ রাজীব হায়দারের সাহসী কৃতকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্যই গানটি লিখেছি। রাজীব শাহবাগের গণ-আন্দোলনের অন্যতম সাহসী যোদ্ধা। আমি রাস্তায় পড়ে থাকা তার রক্তাক্ত নিথর মরদেহের ছবি দেখেছি। অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে তাকে খুন করা হয়েছে।'

 

সুমন আরো লিখেছেন, 'এ গানের মধ্য দিয়ে আমার ভেতর জন্ম নেয়া প্রচণ্ড দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে। আমি রাজীবের বাবার বয়সী। আমার সন্তানরা যে স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে, সেই স্বপ্নের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন চিরদিন বেঁচে থাক। আরো বেঁচে থাক সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তরুণ প্রজন্মের এ সংগ্রাম। জয় বাংলা।'



.......................

দেশের বিশিষ্ট গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর সর্বদা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। '৭১ সালে মুক্তির গান কণ্ঠে ধারণ করে তিনি বাঙালিদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উজ্জীবিত করেছেন। বাঙালিদের প্রতিটি জাগরণের আন্দোলনের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন।

 

রাজধানীর শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্ত্বরে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে উদ্বেলিত তরুণদের আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি সংহতি প্রকাশ করেছেন। এ আন্দোলনের শুরুর দিন থেকেই তিনি তারুণদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে নতুন নতুন গান পরিবেশন করে চলছেন।

 

শুক্রবার শাহবাগের আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ব্লগার ও স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার পরদিনই ফকির আলমগীর নতুন একটি গান তৈরি করেছেন।

 

'আমরা তো ভুলি নাই রাজীব' শিরোনামের গানটির কথা-সুর করেছেন ফকির আলমগীর নিজেই। গানটি তিনি শনিবার বিকালে প্রজন্ম চত্ত্বরে গগণবিদারী কণ্ঠে পরিবেশন করেন।

 

গানের কথা হচ্ছে- 'আমরা তো ভুলি নাই রাজীব, তোমারে ভুলব না/ তোমার রক্তের খুনে রাঙ্গাইলোকে, এই বাংলা/ তুমি ছিলা মুক্তিযোদ্ধার এই দেশের সন্তান/ হাতে নিলা তাই তোরে বন্ধু, বিজয়ের নিশান/ সেই নিশানের মান রাখিতে, দিলে সাধের জান।'

 

এ প্রসঙ্গে ফকির আলমগীর বিবার্তাকে বলেন, 'রাজীব এ প্রজন্মের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। সে আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি করে গেছে। তরুণরা এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আর আমরা তাদের পাশে থেকে প্রেরণা জুগিয়ে যাব।'

 

এর আগে ফকির আলমগীর প্রজন্ম চত্ত্বর নিয়ে আরো দুটি গান গেয়েছেন। প্রথম গানটি লিখেছিলেন ড. তপন বাগচী। গানের কথা হচ্ছে- 'প্রজন্মের এই বন্ধুরা আজ, জেগে আছে আগে-ভাগে/ ভয় নেই কোনো সকলেই আছি, এক সাথে শাহবাগে।'

 

দ্বিতীয় গানটি লিখেছেন ঋদ্ধ রহমান। গানের কথা হচ্ছে- 'লক্ষ প্রাণের জোয়ার এখন শাহবাগে/ রাজাকারের ফাঁসি চাই, এই দাবিটা সবার আগে/ শীতের শেষে আবার এলে লাল ফাগুন/ সবার বুকে জ্বলছে এখন ঘৃণার আগুন।'


জামাত-ই-ইসলামির ডাকা হরতালে হিংসার জেরে বাংলাদেশে সোমবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। হরতাল সমর্থকদের আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। শাহবাগের সমাবেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা।

জামাত-এ-ইসলামির ডাকা হরতালের বিরুদ্ধে এভাবেই ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে প্রতিবাদের কণ্ঠ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে এ ভাবেই ঢাকায় শাহবাগে চলছে লাগাতার ধরণা।
 
আর এই আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাংলাদেশে। চুপ করে বসে নেই জাম-এ-ইসলামি সমর্থকরাও। হরতালের সমর্থনে পথে নেমেছে তারাও। আর তার জেরেই হচ্ছে সংঘর্ষ। বিভিন্ন জায়গায় জামাত সমর্থকদের হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহনে। কক্সবাজারে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়ফ নামতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। হরতাল সমর্থনকারীদের রোষ থেকে বাদ যায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। সংঘর্ষ রুখতে পথে নেমেছে পুলিস ও আরএবি লাঠিচার্জ ছাড়াও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়েছে পুলিসকে। 
 
বাংলাদেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে হিংসার আগুন। কিন্তু, এই হিংসা কোনওভাবেই দমাতে পারেনি আন্দোলনকারীদের। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা। জামাতের ডাকা হরতালকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই ঢাকা শহরে খোলা ছিল স্কুল, কলেজ এবং সরকারি দফতরগুলি। হরতালকে বানচাল করতে পথে নেমে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্লগার রাজীব হায়দরের খুনের প্রতিবাদেও সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। একাত্তরের যুদ্ধপরাধী আজাদের মৃত্যুদণ্ড রদের দাবিতে লাগাতার হরতালের ডাক দিয়েছে জামাত-ই-ইসলামি। অপর অভিযুক্ত আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজারও প্রতিবাদে সোচ্চার তাঁরা। এ নিয়ে তাঁরা পাশে পেয়েছে বিএনপি-কে। কিন্তু, সেই দাবিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনকারাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামি লিগ।


আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, 'ইনশাআল্লাহ, আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।' 
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বেতনকাঠামো বৃদ্ধির বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।


এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রমুখ।


আইনমন্ত্রী বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদ বা মানুষের জীবন হরণ বা জনজীবনে অসন্তোষ তৈরি করতে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে, সেসব রাজনৈতিক দলের কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতি করার অধিকার নেই। এ ব্যাপারে যা করণীয়, তা করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব রয়েছে।


শফিক আহমেদ আরও বলেন, 'সংবিধানের ৩৮ ধারা বিশ্লেষণ করে দেখলে এবং এর সঙ্গে আরপিও মিলিয়ে দেখলে আমার মনে হয়, এসব রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে ২০০৯ সালের একটি রিট আবেদন আছে। সেটা যদি শুনানিতে আসে, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমেও এসব রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার আছে কি না, তা দেখা যাবে।'


অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোনো দলকে তো আর জরিমানা দেওয়া যায় না। তবে তখন জামায়াতের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের সাজা দেওয়া যায় এবং দলকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।


ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, 'তবে জামায়াতের মতো যারা উগ্র দল, তাদের নিষিদ্ধ করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।'


প্রজন্ম চত্বরে শহীদদের স্মরণে কালো পতাকা উত্তোলনপ্রজন্ম চত্বরে শহীদদের স্মরণে কালো পতাকা উত্তোলননজরুল মাসুদ

২১শে ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশের ডাক তরুণদের

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে 'প্রজন্ম স্তম্ভ' স্থাপন করা হয়েছে। প্রজন্ম চত্বরে ফোয়ারার পাশে এ স্তম্ভটি স্থাপন করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় এ স্তম্ভ উদ্বোধন করেন গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার। স্তম্ভটির ভাস্কর মুন্সী নজরুল ইসলাম সুজন বলেন, শহীদ রাজীব আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি এখন আর নেই। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে এ স্তম্ভ নির্মাণ করেছি। এতে লাল-সবুজ রঙকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সাদা-কালোও। সাময়িকভাবে কাঠের তৈরি এ ভাস্কর্য তৈরিতে একদিন সময় লাগে। এ সময় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে স্মরণ করা হয়। অন্যদিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে স্লোগান দিতে-দিতে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ব্লগার, কার্টুনিস্ট, নাট্যকার ও পরিচালক তারিকুল ইসলাম শান্ত (৩৯)। গতকাল বিকালে সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে শাহবাগে যান শান্ত। বিকাল ৪টায় স্লোগান দিতে-দিতে একপর্যায়ে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই ঢলে পড়েন। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

ব্লগার ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমরা ৩ সহকর্মীকে হারিয়েছি। আমরা তাদের ত্যাগ কখনও ভুলব না। এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমরা আন্দোলনে কাজে লাগাব। শান্তর মৃত্যুর ঘটনায় বিকাল ৫টা ৫৯ মিনিট থেকে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

তারিকুল ইসলাম শান্তর বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইলে। কার্টুনিস্ট হিসেবে দৈনিক ভোরের কাগজে কর্মজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি উন্মাদ পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। 'কল্পদূত কমিকস' ছিল তার নিজস্ব উদ্যোগ। প্রথম আলোর সিনিয়র সাব-এডিটর শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছোট ভাই তিনি। শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, সন্ধ্যায় পশ্চিম নাখালপাড়ার বাসায় তার মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে রাতে তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের হিমঘরে রাখার কথা। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জানাজা হবে। পরে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত রোববার রাতজাগা অনেক আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রাতে প্রজন্ম চত্বর থেকে ওই মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। ব্লগারস অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে আরও কিছু কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে— আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ব্লগার ও কার্টুনিস্ট তারিকুল ইসলাম শান্তর জানাজা, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা ১৩ মিনিটে একাত্তরের শহীদদের উদ্দেশে চিঠি লিখে বেলুনে ওড়ানো ও একুশের প্রথম প্রহরে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ। এছাড়া দেশের যেসব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহীদ মিনার নেই একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই শহীদ মিনার স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চের নামে কোথাও অর্থ সংগ্রহ না করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হিসেবে কাউকে নিতে হলে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কেননা এমন অনেককে টক শোতে নিয়ে যাওয়া হয় যারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নন।

প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের চতুর্দশ দিনেও ক্লান্তি আর ভয়হীন তরুণরা। গতকাল সকাল ৬টায় জাতীয় সংগীত ও হরতাল প্রতিরোধের শপথের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ১১টায় ব্লগার রাজীবহত্যার প্রতিবাদে কালোব্যাজ ধারণ করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া রাজীবসহ এ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নিহতদের স্মরণে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় নীরবতা। সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আন্দোলনকারীর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে লোকসমাগমও বাড়তে থাকে।

দুপুরের দিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। একই সময় প্রতিবাদী মানুষ জামায়াতের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে প্রজন্ম চত্বরে সমবেত হন।

গতকাল শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দেশে রাজাকার, আলবদরদের কোনও ঠাঁই নেই। আগে তরুণ প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাস জেনেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এতই শক্তিশালী যে, তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস আবার ফিরিয়ে এনেছে। তিনি আরও বলেন, তরুণরা জেগেছে। তাদের থামিয়ে রাখা যাবে না। তারা এগিয়ে যাবে। এ জাগরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক মুক্তি অবশ্যই অর্জন করব। এছাড়া চলমান গণজাগরণের সঙ্গে যোবেদা খাতুনের নেতৃত্বে ১৭ সংসদ সদস্য সংহতি জানান।

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গতকাল আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ২০০ শিক্ষক। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা রাজাকারদের ফাঁসি ছাড়া অন্য কিছু চাই না।

আরও সংহতি জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত, অভিনেতা তারিক আনাম খান রাইসুল ইসলাম আসাদ, নিপুণ ও নীরব এবং ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদ।

জামায়াতের হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় সারা দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানান প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীরা।

এছাড়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী বিলে অনুমোদন দেওয়ায় অভিনন্দন জানানো হয়। গতকাল বিকালে ট্রাইব্যুনালস বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন। এ খবর শোনার পর আন্দোলনকারীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। জাতীয় পতাকা, ফুলের তোড়া উঁচিয়ে স্লোগান দেন— 'অভিবাদন অভিবাদন, জয় আমাদের সুনিশ্চিত'।

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন টেলিভিশন নাটকের শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী। সোমবার বিকালে প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয়শিল্পী সংঘের শতাধিক সদস্যের একটি দল প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে সংহতি জানান। শিল্পীরা এ সময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যম দিগন্ত টেলিভিশন, 'নয়া দিগন্ত' ও 'সংগ্রাম' পত্রিকা বর্জনের ঘোষণা দেন।

প্রজন্ম চত্বরে যাওয়ার আগে নির্মাতা অরণ্য আনোয়ারের উদ্যোগে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলী তথা মিডিয়াকর্মীরা বিকাল ৩টায় শহীদ মিনারে জমায়েত হন। সেখান থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে-দিতে প্রজন্ম চত্বরে যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুবর্ণা মুস্তাফা, মিতা চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী, আজিজুল হাকিম, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, গাজী রাকায়েত, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, সুমনা সোমা, কুসুম সিকদার, শম্পা রেজা, মোহন খান, শান্তা ইসলাম, রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ।

অ্যনদিকে জামায়াতের হরতাল থাকায় গতকাল প্রজন্ম চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সকালে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বর পরিদর্শনকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, হরতালে জামায়াত-শিবির যাতে কোনও ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে এজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চের প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আন্দোলনস্থল দিয়ে যাতায়াতকারীদের ব্যাগ তল্লাশি করা হয়।

প্রজন্ম চত্বরের ডাকে সারাদেশ
সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার
ইত্তেফাক ডেস্ক
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের ডাকে সাড়া দিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির এবং সেই সঙ্গে সম্প্রতি নৃশংসভাবে নিহত ব্লগার প্রকৌশলী রাজীব হায়দারের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে শপথ গ্রহণ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বরিশাল অফিস জানায়, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের ডাকে সাড়া দিয়েছে বরিশালের মানুষ। গতকাল সকাল ১০টা বাজার সাথে সাথেই এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। একাত্মতা প্রকাশ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চলমান আন্দোলনের সাথে। 

বাকৃবি সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ চত্বরের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল হক, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক. ড. সুলতান উদ্দিন ভূঞা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শহীদুর রহমান খানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রবিবার সকাল দশটায় জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে। উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। তারা কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবি ছাড়াও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানায়।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, রবিবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালিত হয়। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি গার্লস কলেজ ও আলমডাঙ্গা উপজেলার আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজসহ জেলার সকল কলেজে উল্লেখিত কর্মসূচি পালিত হয়। 

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ১০টায় নড়াইলের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। পরে ছাত্র-শিক্ষক সকলে মিলে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের ফাঁসির দাবিতে শপথ গ্রহণ করে। 

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, শাহবাগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের কর্মসূচির সঙ্গে এতাত্মতা প্রকাশ করে গতকাল রবিবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বিকালে নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নিহত রাজীবের স্মরণে কালো পতাকা উত্তোলন করেন স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরী।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, রবিবার শেরপুরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। শেরপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমী, জি.কে. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দিশা প্রিপারেটরী এন্ড হাই স্কুলসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, প্রজন্ম চত্বরের সাথে সংহতি প্রকাশ করে গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় জেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য শপথ বাক্য পাঠ করেন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনরতদের সাথে একত্মতা প্রকাশ করে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রফুল্ল চন্দ্র দেবনাথ। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরত ব্লগার এবং নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনরত নতুন মুক্তিযোদ্ধারা স্লোগান দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির পাশাপাশি আগামীকাল জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতার প্রতিহতের আহবান জানান।

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর জানান, গতকাল সকাল ১০টায় দিনাজপুরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। দিনাজপুর জেলা স্কুল, দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুর একাডেমি হাইস্কুল, বাংলা স্কুল, ইকবাল স্কুল, সেন্টফিলিপস স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট যোসেফ স্কুল, পুলিশ লাইন্স হাইস্কুল, আদর্শ কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজ, কেবিএম কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি পালিত হয়। জেলার ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও উক্ত কর্মসূচি পালিত হয়।

রংপুর প্রতিনিধি জানান, রবিবার রংপুরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গীত। রংপুর জেলার ৮ উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ জেলায় গতকাল সকাল ১০টায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবার শপথগ্রহণ করে। 

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, ঢাকার প্রজন্ম চত্বরের সাথে একাত্মতা ঘোষণা প্রকাশ করে গতকাল রবিবার নেত্রকোনার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময় পথচারীরাও শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় কোন যানবাহনও চলেনি। 

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, গতকাল রবিবার পটুয়াখালী জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সকাল ১০টায় পটুয়াখালী সরকারি কলেজসহ জেলার ১ হাজার ৭৩৭টি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হয় এই কর্মসূচি।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটে টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে গেয়ে উঠলো সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সঙ্গীত। সকাল ১০টায় জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে উড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। সেই সাথে জানানো হলো রাজাকারদের ফাঁসির দাবি। 

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ১০টায় পঞ্চগড়ের সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়। 

রানীশংকৈল সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে গতকাল সকাল ১০টায় একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পৌর শহরের ডিগ্রি কলেজ, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেকমরদ বঙ্গবন্ধু কলেজ, কাতিহার উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকাল ১০টায় উপজেলার সকল বিদ্যালয়ে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

দেবীদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, ব্লগার প্রকৌশলী আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে হত্যাকারী ও মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে রবিবার সকাল ১০টায় দেবীদ্বার উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও ব্লগার রাজীব হায়দারের খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে গতকাল রবিবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ব্লগার প্রকৌশলী রাজীব হায়দার হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, গতকাল রবিবার খাগড়াছড়ির সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টায় জেলা সদরের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। জেলার সকল উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হয়

একুশে ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশ : কান্তিহীন তারুণ্য

সাব্বির মাহমুদ/তরিকুল ইসলাম/নুসরাত জলি
আবদুল কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলন ১৪ দিনে গড়ালেও কান্তি আর ভয়হীন তারুণ্য। অনড় প্রজন্ম চত্বর। দাবি আদায় ছাড়া তারা ঘরে ফিরে যাবে না। গতকাল জামায়াত-শিবিরের হরতাল আর সহিংসতা তাদের বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। সাহসী তরুণদের পদভারে ক্রমেই শাহবাগ পরিণত হচ্ছে প্রতিবাদের আগ্নেয়গিরিতে। যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সব যুদ্ধাপরাধী। এমনটাই জানালেন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা। জামায়াতের ডাকা হরতাল আর রোববারের বৈরী আবহাওয়ার কিছু প্রভাব সোমবারও থাকায় সকালে লোক সমাগম কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রজন্ম চত্বর যেন ফিরে পায় তার চিরচেনা মুখগুলোকে। দুপুর ১২টায় শাহবাগে সূর্যের লাল রশ্মি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সংহতির তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। আর গণজাগরণের সামনের ও আশপাশের স্থান দখল করে বিভিন্ন স্বুল-কলেজের শিার্থীরা। সবার স্লোগান একটাইÑ 'জামায়াতের হরতাল মানি না- মানবো না, '৭১-এ হারিনি- ২০১৩ সালেও হারবো না, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো-রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ো। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত রোববার সারারাত জাগা অনেক আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। সাব্বির নামের এক ব্লগার আজকালের খবরকে বলেন, রোববার রাতে এক মুহূর্তের জন্য আমরা কেউ ঘুমাইনি। সারারাত উচ্চকণ্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল প্রজন্ম চত্বর। এজন্য সকালে আমাদের কয়েকজন সহযোদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েন। 
একুশে ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশ : প্রজন্ম চত্বরে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সোমবার রাত ৯টায় প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার। এর আগে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ওই মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, আজ (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টারও বেশি সময় পর্যন্ত চলা বৈঠকে আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৈঠকে আরো কিছু কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ব্লগার ও কার্টুনিস্ট তারিকুল ইসলাম শান্তর জানাজা, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা ১৩ মিনিটে একাত্তরের শহীদদের উদ্দেশে চিঠি লিখে বেলুনে উড়ানো, ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর ৪টা ১৩ মিনিটে পাকবাহিনী ঠিক একই সময়ে মাথা নুইয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। তার সঙ্গে মিল রেখে এ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে গণজাগরণ মঞ্চের প থেকে জাতীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ। এছাড়া দেশের যেসব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের প থেকে আরো দুটি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রথমত, গণজাগরণ মঞ্চের নামে কেউ যেন কোথাও অর্থ সংগ্রহ না করে, দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হিসেবে এমন অনেককে নিয়ে যাওয়া হয় যারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নন। কাউকে টকশোতে নিতে হলে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ : আহমেদ রাজীব হায়দারের মৃত্যুতে প্রকৃতিও যেন শোকাহত। তার মৃত্যুর পরদিন থেকে অধিকাংশ সময় আকাশ ছিল মেঘলা। এক পর্যায়ে গত রোববার বৃষ্টি ঝরেছে। এরপর গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বইছিল ঠা-া হাওয়া। এমন আবহাওয়ার মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে রাজীবসহ যে তিনজন শহীদ হয়েছেন তাদের ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণজাগরণ চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। গতকাল বেলা ১১টায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। কালো পতাকা উত্তোলন শেষে আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। অন্যান্য দিনের মতো সকাল থেকেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিার্থীরা দলে দলে শাহবাগে আসেন। শহীদ রাজীব স্মরণে তাদের অনেকেরই হাতে দেখা যায় কালো কাপড়ের ব্যান্ড, বুকে কালো ব্যাজ।
হরতালবিরোধী মিছিল : জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে বিােভ মিছিল করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। মিছিলের এক পর্যায়ে তারা রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের একটি বুথ ভাঙচুর করে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতালবিরোধী এ মিছিলটি শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে কলাবাগান পেরিয়ে কারওয়ান বাজার হয়ে গণজাগরণ চত্বরের দিকে ফিরে আসে। ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হুসাইন আহমদ তাফসির, ছাত্রমৈত্রী সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু প্রমুখ মিছিলে নেতৃত্ব দেন। এ সময় হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে মিছিল থেকে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপতিকে আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী বিলে অনুমোদন দেয়ায় রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীরা। গতকাল বিকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ মঞ্চ থেকে এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি আন্দোলনকারীদের পে রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানান। প্রজন্ম চত্বরে উপস্থিত জনতাও করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতিকে।
সংহতি জানালেন দুই মন্ত্রী : যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে গতাকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংহতি প্রকাশ করেছেন। গতকাল বিকালে গণজাগরণ চত্বরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগে তরুণ প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাস জেনেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এতোই শক্তিশালী যে, তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস আবার ফিরিয়ে এনেছে। তরুণদের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, তরুণরা জেগেছেন। তাদের থামিয়ে রাখা যাবে না। তারা এগিয়ে যাবেন। এ জাগরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক মুক্তি অবশ্যই অর্জন করবো। এদেশে রাজাকার-আলবদরের জায়গা হবে না। শাহবাগের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করে মুহিত বলেন, আমি এখানে অংশ নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আর এ প্রজন্মের প্রতিনিধি লাকি। আমি গত ৭ ফেব্রুয়ারি একাত্মতা ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমি বিদেশে ছিলাম। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে থেকে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলাম। আজ সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
সন্ধ্যায় তরুণদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসেন শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় তিনি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তরুণদের উদ্দেশে বলেন, এখনো সময় আছে, তোমরা এই তরুণদের (শাহবাগের তরুণ) কাছে মা চেয়ে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করো। তা না হলে এই বাংলার মাটিতে তোমাদের জায়গা হবে না। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ আপনারা আবার যে '৭১-এর চেতনায় জেগে উঠেছেন তা বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। আমিও এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখেছি। কিন্তু ৪০ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারিনি। রাজাকারদের বিচারের দাবিতে তরুণ প্রজন্ম আজ যেভাবে জেগেছে, তাতে তারা বিজয়ী হবেই। গত রোববার সংসদে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইন সংশোধনের ফলে তরুণদের বিজয় হয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, গণজাগরণ চত্বরের তরুণদের আজকের দাবি একাত্তরের চেতনার প্রতিধ্বনি। আমরা সবাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তিন দশক ধরে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলভাবে শেখানো হয়েছে। আমরা তা পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এখানে উপস্থিত হয়ে মনে হচ্ছে, একাত্তরের গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে দেশে। যারা মুক্তিযুদ্ধে লুট, হত্যা, ধর্ষণ করেছে, তাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েই ছাড়বো আমরা। এই আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ নিশ্চিত হোক।
সংহতি প্রকাশ : প্রজন্ম চত্বরে টানা আন্দোলনের ১৪তম দিনে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি সভাপতি শহিদুল ইসলাম খোকন, মহাসচিব মুশফিকুর রহমান, অভিনেত্রী রাশেদা চৌধুরীসহ সংগঠনের নেতারা গণজাগরণ চত্বরে এসে সংহতি জানান।
গতকাল নাট্যব্যক্তিত্ব রাইসুল ইসলাম আসাদ, অভিনেতা আজিজুল হাকিম, হাসান মাসুদ, নাদের চৌধুরী, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, জয়া হাসান, কুসুম শিকদারসহ বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী সংহতি প্রকাশ করেন। 'গেরিলা' ছবির নায়িকা জয়া হাসান বলেন, আমি আপনাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা অভিনয়শিল্পীরা রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে এই প্রজন্ম চত্বরে এসেছি। এ সময় তারা 'জয় বাংলা', 'ওই রাজাকার, তুই রাজাকার' স্লোগান দেন। এদিকে বিকাল ৪টায় কাদের মোল্লার মামলার দ্বিতীয় সাী শহিদুল হক পান্না সংহতি প্রকাশ করেন। এছাড়াও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
ছাত্র সংগঠনগুলোর সংহতি : যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে সংহতি জানিয়েছেন মতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলো। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে হরতালবিরোধী মিছিল নিয়ে সাইন্সল্যাব, পান্থপথ ঘুরে সংগঠনগুলো দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগে সংহতি জানায়। সংহতি মঞ্চে ছাত্রনেতারা বলেন, সারাদেশের মানুষ জামায়াত-শিবিরের হরতালকে প্রত্যাখ্যান করেছে। গাড়ির চাকা ঘুরেছে, দোকান-কলকারখানা, অফিস-আদালত খুলেছে। তারা জনগণকে হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় ধন্যবাদ জানিয়ে আরো বলেন, শুধু হরতাল প্রত্যাখ্যান করলে চলবে না। রাজপথে থেকে আগামীতে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান সংগ্রামকে সফল করতে হবে। সংহতি মঞ্চে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন তাফসীর, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এস এম শুভ, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকনসহ বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র সমিতি ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা প্রজন্ম চত্বর : জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের ১৪ দিনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। গতকাল সোমবার জামায়াত-শিবিরের হরতাল ও নাশকতার আশঙ্কা থাকায় এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রজন্ম চত্বর পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা জানান।
বেনজির আহমেদ বলেন, আজকের (সোমবার) হরতালে জামায়াত-শিবির যাতে কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে এ জন্য সারা ঢাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর তিনি প্রজন্ম চত্বরে নির্মিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া গতকাল জামায়াত-শিবিরের হরতালের কারণে গণজাগরণ মঞ্চের প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আন্দোলনস্থল দিয়ে যাতায়াতকারীদের ব্যাগ এমনকি অনেকের দেহ পর্যন্ত তল্লাশি করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আজিজ সুপার মার্কেট, রূপসী বাংলা মোড় ও মৎস্য ভবন সড়কে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের দেখা গেছে।
http://www.ajkalerkhabarbd.com/pages/details/2013/02/19/77963

আপনার আমার ইচ্ছাই শাহবাগ আন্দোলনের গন্তব্য

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: সোম, ১৮/০২/২০১৩ - ১১:৪৮অপরাহ্ন) 
ক্যাটেগরি: 

গত কদিনে বেশ কয়েকজনকে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে দেখলাম।এদের অনেকেই প্রথম থেকে এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। এখন তারা প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনের লাগাম কার হাতে এবং আন্দোলনে লাভটা হচ্ছে কী, এর গন্তব্য কোথায়?

গুটিকয়েক তরুণের স্লোগানের মাধ্যমে এই আন্দোলন যখন শুরু হয় তখনও অনেকে এই আন্দোলনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছিলেন। তারুণ্যের শক্তিকে তারা বিশ্বাস করতে পারেন নি। কিন্তু দিন যতই গেছে তরুনেরা ততোই মানুষকে অবাক করেছে। সবার ভুল ভেঙ্গে এই আন্দোলন রূপ নিয়েছে গণ আন্দোলনে। সুর্নির্দিষ্ট কোন নেতা নেই বলে এই আন্দোলন দুই দিনও টিকবে না বলে যারা রায় দিয়েছিলেন তাদের চোখের সামনেই গত ১৪ দিন ধরে হাজার হাজার মানুষ রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে শাহবাগে আছেতো আছেই।

এইস অভূতপূর্ব ঘটনা কাকে না অবাক করেনি? যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের দল জামায়াত ইসলাম যারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে তাদের নেতাদের রক্ষার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছে তারা পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা আদৌ তাদের হিসাবের ভেতর ছিল না। তৃতীয় শক্তি যারা রষ্ট্র ক্ষমতা হাতানোর নীল নকশায় ব্যস্ত ছিল এই আন্দোলনে তাদের পাশার দানও উল্টে গেছে। এই আন্দোলন প্রধান বিরোধী দলকে কতোটা বিমূঢ় করে দিয়েছে তা দলটির নেতাদের স্ববিরোধী কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যায়। আর ক্ষমতাসীন দলকে এই আন্দোলন বিশাল একে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।একটু উনিশ বিশ হলেই এই আন্দোলন যে সরকারকে একে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে তা তারা ভালোমতোই জানে।

শাহবাগ আন্দোলনকে যারা ক্ষমতাসীন দলের বানানো নাটক বলতে চান তারাও বোঝেন যে নাটক বানানো খুবই সহজ কিন্তু ভাড়া করে দিনের পর দিন নাটকের দর্শক জমানো যায় না। এ কারণে পর্দার আড়ালে নানা উপায়ে এই আন্দোলনকে ঘায়েল করার কারসাজি শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের বন্ধু সেজে তাদের পিঠে ছুরি মারার চেষ্টা করার লোকজন তো আগে থেকেই আছে। এখন তাদেরর সাথে যোগ দিয়েছে এতোদিন চুপ মেরে দূর থেকে বাতাসের দিক চেনার চেষ্টা করা সুবিধাবাদীরা। দলে দলে তারা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করছে।আন্দোলন থেকে যতটুকু ফায়দা লোটা যায় সেটাই তাদের লাভ। ।ক্ষমতাসীনেরা আছে কীভাবে আন্দোলনকে বাগে রাখা যায় সেই চেষ্টায় আর আন্দোলন বিরোধীরা ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে নিত্য নতুন কূট কৌশলে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে।

এতসব বাধা ডিঙ্গিয়ে আন্দোলন কি স্বমহিমায় টিকে থাকতে পারবে? যারা এই প্রশ্নটি করেন তাদের কাছে এই আন্দোলনের বয়স মাত্র ১৪ দিন। কিন্তু যারা এই আন্দোলনের সৃষ্টিকর্তা সেই সব তরুণেরা জাননে এই আন্দোলন এক দিনে শুরু হয় নি। বছরের পর বছর ধরে এই আন্দোলনের বীজ বোনার কাজ চলে আসছে। যারা এই বীজ বুনেছেন সেইসব তরুণেরা কেউ আওয়ামী লীগ, বিএনপি থেকে আসেন নি; কেউই তাদেরকে যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে, জামাত-শিবিরের মতো ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়াশীল দলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য ডেকে আনেনি- তারা স্বেচ্ছায় নিজের বিবেকের তাড়নায় এই পথে এসেছেন।গত ৪২ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেটি করার সাহস করেনি এই তরুণেরা সেই কাজটি করার জন্যই স্বেচ্ছায় মাঠে নেমে এসেছেন।মূলত এদের চাপেই আওয়ামী লীগ তাদরে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে বাধ্য হয়, এদের চাপে পড়েই জামাতের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে, এদের কাছেই মাথা নত করে বিএনপি বলতে বাধ্য হচ্ছে ক্ষমতায় গেলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে আগ্রহী।

এই সব দুর্বার তরুণের কাছে শাহবাগ আন্দোলন নিছক কোন আন্দোলন নয় এটি একটা যুদ্ধের শেষ প্রান্ত। এখান থেকে পেছনে হটার কোন উপায় নেই।এবং এই ধারনাটি তারা ক্রমশ জনমানুষের ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। দুদিন বাদেই তারুণ্যের এই ইমোশন কমে যাবে এমন ধরনা করে যারা বসে আছেন তাদের অজান্তেই এই আন্দোলন তরুণদের একার যুদ্ধ থেকে পরিণত হয়েছে আপামর জনসাধারণের চেতনার প্লাটফর্মে। একে দমিয়ে রাখার চিন্তা পুরো মাত্রায় অবাস্তব। এ কারণেই এই কদিন আগেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবীতে ডাকা হরতালে কুঁকড়ে থাকা মানুষগুলোকে আজ দেখুন, তারা কেমন দৃঢ়তার সাথে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হুট করে একটা বিদ্যুত তরঙ্গ যেন শাহবাগ থেকে আমাদের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিক্ষুক তার সারাবেলার উপার্জন দিয়ে খাবার কিনে আন্দোলনকারীদের খওয়াচ্ছে, স্কুলের বাচ্চা টিফিন নিয়ে এসে শাহবাগে বিলিয়ে দিচ্ছে, রিক্সায়ালারা বিনা ভাড়ায় লোকজনকে শাহবাগে পৌঁছে দিচ্ছে,শাহবাগের এক ডাকে পুরো দেশ স্থবির দাঁড়িয়ে পড়ছে-- অপরাজনীতির মারপ্যাচে চিড়েচ্যাপ্টা হওয়া হতাশ জনতাকে বিনিসুতোর মালায় গাঁথা এই আন্দোলনকে রোখে কে?

পৃথিবীর তাবৎ সফল বিপ্লব, আন্দোলনের দিকে নজর দিলে দেখা যায় সেখানে প্রতি বিপ্লবীরা ছিল,সুবধাবাদীরা ছিল, রাজনীতি ছিল, প্রতিপক্ষ ছিল- এগুলো বড় কোন আন্দোলনের প্রাত্যহিক অনুষঙ্গ। কিন্তু গণমানুষের উপস্থিতি থাকলে এসবের কোন কিছুই আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। শাহবাগকেও তাই ঠেকানো যাবে না। খুন করে, নাস্তিক আখ্যা দিয়ে,লোভের ফাঁদে ফেলে, দলীয় পরিচয় দেখিয়ে কতিপয় দোনোমোনো মানুষের মনে ভয়, সন্দেহ ধরিয়ে তাদরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা সম্ভব কিন্তু লাখ লাখ জেগে ওঠা মানুষকে ঘুম পাড়ানো কখনোই সম্ভব নয়।

আর তাই আপনার যখন আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি, গন্তব্য নিয়ে সন্দেহ হয় তখন আপনি চারপাশে তাকান, দেশের আনাচে কানাচে থেকে সারা বিশ্বে শাহবাগের সমর্থনে জড়ো বাঙালিদের মুখগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখুন--দেখবেন তারা সবাই আপনার আমার মতোই সাধারণ মানুষ। তারা কোন রাজনৈতিক দলের কথা বলতে আসেনি, কোন রাজনৈতিক দাবী নিয়েও তারা স্লোগান দিচ্ছে না।তাদের কারো বুকে বাবার বুলেটবিদ্ধ লাশ, কারো বুকে মায়ের লাঞ্ছনা, কারো চোখে ভাই হারানোর বেদনা, কারো হাতে স্বজনের কুড়িয়ে পাওয়া অস্থি....যতোদিন নিজের চারপাশে ভেতরে ভেতরে ক্ষত পুষে রাখা এ্সইসব ধারণ মানুষকে দেখতে পাবেন ততোদিন জেনে রাখুন আপানার কোন নেতা দরকার নেই, আপনার পথ হারাবার কোন ভয় নেই, আমার আপনার ইচ্ছাই আন্দোলনের গন্তব্য;চলমান যুদ্ধের জয় পরাজয়ের নির্ধারক।

১৯/০২/২০১৩
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।

http://www.sachalayatan.com/murtala31/48065


দেশবাসীর প্রতি প্রজন্ম চত্বরের আহ্বান- হরতাল বর্জন করুন
রাজন ভট্টাচার্য ॥ দিনভর বর্ষণের মধ্যেও উত্তাল ছিল শাহবাগ। এক মিনিটের জন্যও সেøাগান থামেনি। তেমনি ছিল বাঁধভাঙ্গা মানুষের ঢল। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে হার মানে বৃষ্টি। বৃষ্টি আর কনকনে বাতাসের মধ্যে অপরাধবোধ ধুয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা ছিল আন্দোলনকারীদের। প্রজন্মযোদ্ধা রাজীবকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন সবাই। পাশাপাশি শাহবাগে রাজীব স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। জামায়াতের ডাকা আজকের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় বের হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তরুণযোদ্ধারা। স্কুল-কলেজ-ব্যাংক-বীমা-দোকানপাট-কলকারখানা খোলা রাখাসহ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামার আহ্বানও জানানো হয়েছে জাগরণ মঞ্চ থেকে। হরতালে সারাদেশে গাড়ি চালানো ও দোকানপাট খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহন মালিক সমিতি ও দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। রবিবার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির প্রতি সমর্থন জানাল নতুন প্রজন্ম। একযোগে সকাল ১০টায় বুধে হাত দিয়ে গাইল 'আমার সোনার বাংলা...।' সাইবারযোদ্ধা রাজীব হত্যার প্রতিবাদে আজ সারাদেশে কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচী পালন করা হবে। রবিবার বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দিনভর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এসে সংহতি প্রকাশ করেন সর্বস্তরের মানুষ। থেমে থেমে ছিল হরতালবিরোধী স্লোগান। রাজীবকে নিয়ে গান লিখেছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। 
রাজীব হত্যায় পাকিস্তানে উল্লাস ॥ সাইবারযোদ্ধা রাজীব হত্যার পর থেকেই পাকিস্তানের বিভিন্ন ব্লগে উল্লাস চলছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের একাধিক ব্লগে লেখা হয়েছে 'শাবাশ-শাবাশ'। তোমাদের শাবাশ। যারা নাস্তিক, ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে তাদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের ব্লগারদের উদ্দেশে পাকিস্তানী মিত্রদের বক্তব্য-তোমরা এগিয়ে যাও। সফলতা আসবেই। উল্লেখ্য, শুক্রবার শাহবাগে জাগরণ সমাবেশ শেষ করে নিজ বাসার সামনে জামায়াত-শিবিরের হাতে খুন হন প্রজন্ম সেনা শোভন। এর আগে তাঁকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে জামায়াত-শিবির পরিচালিত সোনার বাংলা ব্লগে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। 
সাইবারযোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও হুমকি ॥ জামায়াত-শিবির পরিচালিত বিভিন্ন ব্লগসহ ফেসবুকে ১০ জনের বেশি প্রজন্ম যোদ্ধাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাদের টার্গেট এসব প্রজন্ম যোদ্ধাসহ পুলিশের কয়েকজন কর্তাব্যক্তির নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের পক্ষ থেকে শনিবার সোনার বাংলা ব্লগ বন্ধের পর জামায়াত-শিবির চলমান আন্দোলন প- করতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, হুমকি দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। প্রজন্ম চত্বর থেকে কেউ বাসায় ফিরবে না; যতক্ষণ না পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা না হয়। এদিকে শাহবাগের প্রজন্ম যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। 
দোকান খোলা রাখা সহ গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত ॥ জামায়াত-শিবিরের আজকের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে সারাদেশে গাড়ি চালানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি। পাশাপাশি জামায়াতের পরিচালিক পরিবহন কোম্পানির সদস্যপদ বাতিলেরও ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিকরা। একইসঙ্গে দোকান খোলা রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। রবিবার প্রজন্ম চত্বরে মাইক থেকে সারাদেশে দোকানপাট খোলা রাখার ঘোষণা দেয়ার পর করতালি দিয়ে সবাই স্বাগত জানান। 
হরতাল প্রত্যাখ্যান করুন ॥ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতের আজকের হরতাল প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন শাহবাগের আন্দোলনকারীরা। ঘোষণা মঞ্চ থেকে বলা হয়, আপনারা সবাই হরতাল প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় বেরিয়ে আসবেন। এই হরতাল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিপক্ষে। জনস্বার্থে এই হরতাল নয়। তাই হরতালের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সাইবারযোদ্ধা ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, হরতালে আপনারা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবেন। দোকান খোলা রাখবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে স্বাধীনতার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। যে কোন মূল্যে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে। হরতালে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান-কলকারখানাসহ সবকিছু খোলা রাখার আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা। 
রাজীবকে নিয়ে কবীর সুমনের গান ॥ শাহবাগ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দারকে নিয়ে গান গাইলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। রাজীব গত শুক্রবার রাতে শাহবাগ থেকে বাসায় ফেরার পথে জামায়াত-শিবিরের হাতে খুন হন। রবিবার সকালে কবীর সুমন তাঁর ওয়েবসাইটে গানটির অডিও প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে সুমন তাঁর ওয়েবসাইটে লিখেছেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুদের হাতে রাজীব হায়দার খুন হয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সী রাজীব একজন অক্লান্ত সাহসী সাইবারযোদ্ধা ছিলেন। তিনি মহান শাহবাগ আন্দোলনের একজন লড়াকু ছিলেন। আমি তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েছি, তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকার ছবি দেখেছি। তৎক্ষণাৎ আমি গানটি তৈরি করেছি এবং পোর্টেবল ডিজিটাল রেকর্ডারে রেকর্ড করেছি।' সুমন আরও বলেন, 'দুঃখ ও রাগ প্রকাশের এটাই আমার একমাত্র মাধ্যম। আমি তাঁর বাবার বয়সী। যে দাবিতে আমার একজন সন্তানের মৃত্যু হলো, এই গানের মাধ্যমে সেই দাবির সঙ্গে আমি সংহতি জানালাম, একই সঙ্গে সমবেদনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করলাম। ধর্মনিরপেক্ষ ও সত্যিকার মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দীর্ঘজীবী হোক। বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তরুণদের সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক। জয় বাংলা!' এর আগে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের উদ্দেশে কবীর সুমন তিনটি গান লেখেন ও এতে সুর দেন। গান তিনটি হচ্ছে, গণদাবি, শাহবাগে রাতভোর ও তিন মিনিট।
সুমনের লেখা গান- শহীদ রাজীব ॥ 'কী বলব আজ কাকে/কোন সান্ত¡না দেব/এত দূরে থাকি কী করে বলব/খুনির খবর নেব!/কী বলব বন্ধুদের/কিসের অভয় দেব/এত দূরে থাকি কী করে বলব/আমি প্রতিশোধ নেব/তবুও আমার গানে/খুনির বিরুদ্ধতা/শহীদ রাজীব পেলেন/ মুক্তিযোদ্ধার অমরতা/শহীদ রাজীব হায়দার/আমার সালাম নাও/এই দুনিয়ায় শাহাদাত বৃথা, যায় না তো একটাও। তোমার রক্তে রাঙা/বিপুল অঙ্গীকার/ যোগ্য বিচার পাবে একদিন/খুনি আর রাজাকার...।' 
এক মিনিটের জন্যও স্লোগান থামেনি ॥ শাহবাগ আছে। আছে প্রজন্ম চত্বর। যেখানে দিনভর প্রতিবাদী মানুষের মিলনমেলা। বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা। শুধু নেই রাজীব। তার শোক বুকে নিয়ে চলছে অবিরাম প্রতিবাদ। নীরব কান্না যেন সবার বুকেই। তাই তো প্রকৃতি যেন আর নীবর থাকতে পারেনি। রবিবার সকাল থেকেই দিনভর বৃষ্টি। কখনও তীব্র, কখনও সামান্য। কনকনে হিম বাতাস। রাজীবের মৃত্যুতে যেন হাজারো প্রতিবাদী কণ্ঠের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে প্রকৃতিও। বাস্তবতা হলো বৃষ্টি আর বাতাসের মধ্যেও এক মিনিটের জন্য স্লোগান থামেনি শাহবাগে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনভর উত্তাল ছিল শাহবাগ। হাজার হাজার মানুষ মিছিল, স্লোগান আর প্রতিবাদী গানে মাতিয়ে রাখে। 
সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শাহবাগে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। বিকেল তিনটার পর থেকে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে থাকে। 
তখনও মূল মঞ্চ থেকে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে স্লোগান, আর এর সঙ্গে কেউ ছাতা মাথায়, কেউবা রেইন কোর্ট গায়ে আবার কেউবা বৃষ্টিতে ভিজেই স্লোগানে কণ্ঠ মেলান। অনেকে বিভিন্ন দোকানের ছাউনিতে দাঁড়িয়ে স্লোদেন। বৃষ্টিতে সকল অপরাধবোধ ধুয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা আন্দোলনকারীদের। অনেকে দিনভর ভিজেও রাস্তায় ঠাঁই বসেছিলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা বঙ্গবন্ধু মহিলা পরিষদের সভানেত্রী সেলিনা রুহুলের নেতৃত্বে একদল নারী এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। সেলিনা রুহুল বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের যেন ফাঁসি হয়, সেজন্য বৃষ্টির মধ্যে আজও এসেছি। প্রতিকূল আবহাওয়া এ আন্দোলন থামাতে পারবে না। দিনাজপুর থেকে আসা বিল্লাল হোসেন জানালেন, এখানে আমি একাই এসেছি। বিবেকের তাড়নায় আর ঘরে থাকতে পারিনি। যতদিন আন্দোলন চলবে, ততদিন আমার ঠিকানা রাজপথে। পিরোজপুর থেকে আসা কামাল জানালেন, স্থানীয়ভাবে জাগরণ মঞ্চের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের প্রতিনিধি হিসেবে সংহতি প্রকাশ করতে এসেছি। তা ছাড়া বৃষ্টি চলার সময় মঞ্চ থেকে বার বার বলা হয় 'মেঘ দেখে কেউ করিস না ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে'। 
প্রজন্ম চত্বরে সংসদের প্রতিনিধি দল ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনের বিচারের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে পাস হয় সন্ধ্যায়। এ খবর নিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসেন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। বিল পাসের খবর শুনে করতালি দিয়ে প্রতিবাদী জনতা স্বাগত জানান। এ সময় আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, সারাদেশের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে আইন পাস করা হলো। আমারা চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। এ জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। '৭১-এর রণাঙ্গনে আমরা যেসব স্লোগান দিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম আবারও সেই স্লোগান ফিরে এসেছে। তরুণযোদ্ধাদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে সারাদেশে একাত্তরের 'জয় বাংলা' স্লোগান ছড়িয়ে দাও। মানুষ আজ জেগে উঠেছে। এদেশে জামায়াত-যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই নেই। আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ নেতা ফজলে হোসেন বাদশাসহ অনেকে। উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-02-18&ni=126031

প্রজন্ম চত্বরে অবস্থানের ১৪ দিনে ॥ শোকের কালো রং
০ প্রজন্মসেনা শহীদ রাজীব স্মরণে শাহবাগসহ সারাদেশে একযোগে উঠল কালো পতাকা, সবার বুকে কালো ব্যাজ 
০ তারকা ও বিজ্ঞাপনদাতাদের দিগন্ত টিভি বর্জন 
০ পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড, শাহবাগে প্রজন্ম স্তম্ভ
রাজন ভট্টাচার্য ॥ জামায়াতের ডাকা হরতালে প্রত্যাখ্যানে ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল ছিল শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। যোগ দিয়েছেন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ। প্রজন্ম সেনা রাজীব স্মরণে সকাল ১১টায় গণজাগরণ মঞ্চসহ দেশব্যাপী একযোগে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচী পালন করা হয়। এ সময় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সমবেতরা। বাসা-বাড়ি-অফিস-আদালত-দোকান সবখানেই কালোয় কালোয় প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশপ্রেমিক মানুষ। সংহতি প্রকাশ করে দিগন্ত টিভি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন অর্ধশতাধিক তারকা অভিনয় শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক। রাজাকার ও তাদের সমর্থকদের দেশ ছাড়ার দাবি জানিয়েছেন সকলেই। আন্দোলনের ফাঁকে ফাঁকে চলে হরতালবিরোধী স্লোগান। হরতাল বর্জন করে সর্বস্তরের মানুষকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান তরুণযোদ্ধারা। রাত নয়টার পর নতুন কর্মসূচী ঘোষণার কথা রয়েছে প্রজন্ম চত্বর থেকে।
শাহবাগে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী প্রজন্ম স্তম্ভ। সংহতি প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশে রাজাকারদের কোন ঠাঁই নেই। রবিবার হরতাল প্রত্যাখ্যান করতে জাগরণ মঞ্চ থেকে সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হরতাল প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নামেন সর্বস্তরের জনতা। খোলা ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দোকানপাট ও শপিং মল। মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনও চলাচল করেছে প্রচুর। হরতাল মানি না/মানবো না/জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি/ আইন করে বন্ধ কর এসব স্লোগান দেন প্রজন্মযোদ্ধারা। এসেছে সময় এবার/বাংলাদেশ জেগেছে আবার/হবেই-হবেই-হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই গানে আন্দোলনকারীদের সবাইকে মাতিয়ে রাখে তরুণ শিল্পী সাগর। 
দিগন্ত টিভি বর্জনের আহ্বান তারকাদের ॥ জনজাগরণের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় দিগন্ত টেলিভিশন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন অভিনয় শিল্পীরা। বিকেলে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এসে তারা এ ঘোষণা দেন। এর আগে জাতীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে একই ঘোষণা দেয়া হয়। সমাবেশ শেষে অর্ধশতাধিক শিল্পী-কলাকুশলীর দলটি শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে।
যুদ্ধাপরাধীর মালিকানায় চলা এই টিভি চ্যানেলটির আর কোন অনুষ্ঠান প্রযোজনা, পরিচালনা বা নাটকে অভিনয় করবেন না বলেও তারা জানান। শহীদ মিনারে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড এই তিনটি সংগঠনের ব্যানারে শিল্পীরা সংহতি প্রকাশ করেন। এ সময় পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জেমি বলেন, আমরা ঠিক করেছি এখন থেকে জামায়াতের যে কোন মিডিয়ায় কাজ করা বন্ধ করে দেব। ইতোমধ্যে তিনি দিগন্ত টেলিভিশনে চলচ্চিত্রবিষয়ক একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান।
জামায়াতের মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন না দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন এ্যান্ড ফিল্ম এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঝুনা চৌধুরী, সুবর্ণা মুস্তাফা, বদরুল আনাম সৌদ, অভিনেতা ওয়াহিদা মল্লিক জলি, গাজী রাকায়েত, জয়া আহসান, কুসুম শিকদার, আজিজুল হাকিম, শম্পা রেজা, তারিক আনাম খান, রোকেয়া প্রাচী, হাসান মাসুদ, নাদের চৌধুরী, চঞ্চল চৌধুরী, কচি খন্দকার, অরণ্য আনোয়ার, কেএস ফিরোজ, আফরোজা বানু, সাবেরী আলম, রওনক হাসান, শান্তা ইসলাম, জ্যোতিকা জ্যোতি, হাসান মাসুদ, বৃন্দাবন দাস, শাহনাজ খুশি, তারেক মাহমুদ, আনজাম মাসুদ, গোলাম ফরিদা ছন্দা, বিন্দু, মনিরা মিথু, ইমরান হোসেন ইমু, অহনা, হিল্লোল, চিত্রলেখা গুহ, নওশীন, অদ্বিতীয়া কোয়েল প্রমুখ।
এছাড়া শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরের গণআন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম খোকন, মহাসচিব মুশফিকুর রহমান, অভিনেত্রী রাশেদা চৌধুরীসহ সংগঠনের নেতারা গণজাগরণ চত্বরে এসে সংহতি জানান। শহিদুল ইসলাম খোকন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আগামীতেও তাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকার কথা জানান। উপস্থিত সমবেতদের নিয়ে 'ওই রাজাকার, তুই রাজাকার' স্লোগানও দেন শহিদুল ইসলাম খোকন।
খুব ভোরে, এসেছি এখানে-সার্কেলের গান ॥ শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ব্যান্ড দল 'সার্কেল' বেঁধেছে গান- 'খুব ভোরে, এসেছি এখানে জনস্রোতে হারাই'। তরুণ শিল্পীদের ছোট দলটিকে শাহবাগেই দেখা গেছে বার বার। জনস্রোতে হারিয়ে গিয়ে দলের সদস্যরা যেমন স্লোগান তুলেছেন তেমনি গেয়েছেন গান। তাঁদের গানে নতুন সূর্যটাকে নতুন করে দেখার প্রত্যয়। দলের সদস্য সঞ্জয় বিশ্বাস 'প্রতিশ্রুতি' শিরোনামে তাদের নতুন গানটি প্রসঙ্গে বলেন, এটি মূলত ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকা। শাহবাগের আন্দোলন হাজার বছরের পরেও বেঁচে থাকবে। তিনি বলেন, সার্কেল একটি ছোট্ট ব্যান্ড দল। এখনও পর্যন্ত আমরা গান করি নিজেদের জন্য। তবে শাহবাগ কারও একার বা নিজেদের বিষয় নয়। এটি সবার। গোটা দেশবাসীর এটি প্রাণের আন্দোলন। তাই এই গানটি করা। 'খুব ভোরে, এসেছি এখানে/ জনস্রোতে হারাই/এক হয়ে/ নতুন সূর্যটাকে দেখব বলে, নতুন করে আজ এখানে মিশে যাই এক শরীরে/ তোমায় দেয়া কথা রাখব বলে আমার চিৎকার বাতাসে মিশে/ বধির তুমি, শুনতে কি পাও তা?
রাজীব স্মরণে উঠল কালো পতাকা ॥ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে রাজীবসহ যে তিনজন শহীদ হয়েছেন তাদের ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণজাগরণ চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। কালো পতাকা উত্তোলন শেষে আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এ সময় প্রতিবাদী সেøাগান ধরেন সবাই। আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না/ রাজীবের রক্ত বৃথা যেতে দেব না/ তোমার আমার ঠিকানা/শাহবাগের মোহনা/ এক রাজীব লোকান্তরে, লক্ষ রাজীব ঘরে ঘরে। 
প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীরা শপথ নেন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরসহ ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবে না। চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনের সঙ্গে দেশপ্রেমিক সকল মানুষকে একাত্ম হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য-স্বাধীনতার ৪২ বছর পর মানুষ আবারও জেগে উঠেছে। সবাই সাম্প্রদায়িকতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এক। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই সময়ে সবাইকে জেগে ওঠা উচিত। '৭১-এর ঘাতক কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলমান গণআন্দোলনের ১৪তম দিন ছিল সোমবার। ইতোমধ্যে গণআন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে গণজোয়ারে আসা মানুষের সংখ্যা।
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় প্রত্যাখ্যান করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগ মোড়ে এ বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ আন্দোলনে যোগ দেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় জাগরণ সমাবেশ। উভয় সমাবেশেই যোগ দেন লাখো জনতা। শুক্রবার রাতে ব্লগার রাজীবকে খুন করে জামায়াত-শিবির। এর পরই আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় উত্তাল আন্দোলন। রাজীবের লাশ ছুঁয়ে শপথ নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, শোককে শক্তিতে পরিণত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে। শনিবার রাতে রাজীবসহ নিহতদের স্মরণে সোমবার সারাদেশে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচী পালন করা হয়। একযোগে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি কালো পতাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে। কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। এদিকে হরতাল উপেক্ষা করে সোমবার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রজন্ম চত্বরে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা এসে সংহতি প্রকাশ করেছেন। রবিবার দিনভর বৃষ্টি থাকায় সোমবার মধ্য রাতে প্রজন্ম চত্বরে ত্রিপল দিয়ে শেড নির্মাণ করা হয়েছে। প্রজন্মসেনারা জানিয়েছেন, বৃষ্টির আশঙ্কায় শেড নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। 
রাজাকার সমর্থকদের দেশ ছাড়ার
দাবি ॥ শুধু যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নয়, রাজাকার সমর্থকদের বাংলাদেশে বসবাসও নিষিদ্ধ করতে হবে। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, শাহবাগের গণজাগরণ নতুন কোন বিষয় নয়। ৪১ বছরের যে অমীমাংসিত কাজ রয়ে গেছে তা সমাধান করে দেশকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করতে হবে। আমরা চাই দেশ থেকে রাজাকাররা চলে যাক। কারণ তারা বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না। 
আজিজুল হাকিম যা বললেন ॥ প্রজন্ম চত্বরে সংহতি জানাতে এসেছিলেন অভিনেতা আজিজুল হাকিম। এ সময় তিনি বলেন, তরুণরা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শাণিত করছে। '৭১ সালেও তরুণরা মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আজও সেই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের মধ্যে। আমরা অনেক আগে থেকেই চেয়েছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। এ ধরনের আন্দোলন আরও আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। তরুণরা নিজ উদ্যোগে এ আন্দোলন শুরু করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। 
চির বিদায় নিলেন শান্ত ॥ শাহবাগের আন্দোলনে টানা অংশগ্রহণ করে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন কার্টুনিস্ট ও ছড়াকার তরিকুল ইসলাম শান্ত। সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সাইবারযোদ্ধা ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমরা তিন সহকর্মীকে হারিয়েছি। আমরা তাদের ত্যাগ কখনও ভুলব না। এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে আমরা আন্দোলনকে কাজে লাগাব। শান্তর মৃত্যুর ঘটনায় বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিট থেকে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শান্ত বিকেলে সংস্কৃতি কর্মীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে শাহবাগে যান। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হলে ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 
দেশে রাজাকারদের কোন ঠাঁই নেই অর্থমন্ত্রী ॥ দেশে রাজাকার, আলবদরদের কোন ঠাঁই নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সোমবার বিকেলে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এর আগে তরুণ প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাস জেনেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এতই শক্তিশালী যে, তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস আবার ফিরিয়ে এনেছে। তরুণরা জেগেছেন। তাদের থামিয়ে রাখা যাবে না। তারা এগিয়ে যাবেন।
পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড ॥ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের জাগরণ পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। বলা হয়েছিল ব্রিগেড গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে মাঠে নামার। আন্দোলনকারীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পাড়া-মহল্লায় শুরু হয়েছে আন্দোলন। চলছে নানা কর্মসূচী। রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে স্বাধীনতা প্রজন্ম মঞ্চের ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পুরান ঢাকার সুশীল সমাজ এই আয়োজন করেছে। 
এদিকে, শাহবাগে গণজাগরণ চত্বরের আহ্বানে পুরান ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কালো পতাকা ও কালো ব্যাজ ধারণ করেছে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংহতি জানিয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে স্বাধীনতা মঞ্চ যতদিন প্রয়োজন এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে। জুবিলী স্কুল, সেন্ট গ্রেগরি স্কুল, সরকারী কবি নজরুল কলেজ, সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, মহানগর মহিলা কলেজ, বাংলাবাজার স্কুলসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-02-19&ni=126113



শাহবাগ প্রাঙ্গণের চেতনায় চুরমার জামাতের হরতাল


বিক্ষিপ্ত হিংসায় হত তিন
শাহবাগ প্রাঙ্গণের চেতনায় চুরমার জামাতের হরতাল
শাহবাগ স্কোয়ারের আন্দোলনকারীদের ডাকে সাড়া দিয়ে মৌলবাদী জামাতে ইসলামির ডাকা হরতাল কার্যত ব্যর্থ করে দিলেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। হরতালকারীদের ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর হুমকি উপেক্ষা করে রাস্তায় বাস ও অন্য যানবাহন চলেছে। ব্যাঙ্ক ও অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। শেয়ারবাজারে লেনদেনও হয়েছে আর পাঁচ দিনের মতোই। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, এমনকী সমস্ত প্রাথমিক স্কুলও এ দিন খোলা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা শান্তিতে পরীক্ষা দিয়ে শাহবাগ স্কোয়ারে এসে জড়ো হন। 
এর মধ্যেই কাল সংসদে পাশ হওয়া 'যুদ্ধাপরাধ আইন সংশোধনী বিল'টিতে এ দিন সই করেছেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। গেজেট নোটিফিকেশনের পরেই আইনটি কার্যকর হবে। জনজোয়ারের দাবি মেনে সরকার এই সংশোধনী আনায় কোনও ব্যক্তির পাশাপাশি জামাতে ইসলামির মতো দল এবং তাদের বিভিন্ন সংগঠনকেও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় তোলা যাবে। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, "এর পর জামাতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।"
শাহবাগের 'স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বর' থেকে কাল জামাতের হরতাল ব্যর্থ করার ডাক দিয়ে বলা হয়েছিল, 'পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড গড়ুন, জামাত-দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধ করুন'।
নতুন প্রজন্ম
শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরে গণবিক্ষোভে সামিল এই খুদেও।
ঢাকায় সোমবার ছবিটি তুলেছেন উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী।
অন্যান্য হরতালে জামাত এবং তার ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের কর্মীরা সকাল থেকেই দোকানপাটে হামলা চালিয়ে, বাস-গাড়ি ভাঙচুর করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। এ দিনও সকালে তারা বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঝটিকা হামলা শুরু করেছিল। কিন্তু পুলিশ ও মানুষের প্রতিরোধে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়ে যায়। সে সময়েই জামাতের কর্মীরা আগুন লাগানোর জন্য একটি বাসকে তাড়া করলে সেটি উল্টে যায়। তার নীচে চাপা পড়ে এক জন মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাও মানুষের জেদকে ভাঙতে পারেনি। 
রাস্তায় লোকজন কিছুটা কম থাকলেও জনজীবন প্রায় স্বাভাবিকই ছিল। এই প্রথম হরতাল অমান্য করে সমস্ত স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। অন্যান্য ব্যাঙ্কের পাশাপাশি জামাতে ইসলামির 'নিজস্ব ব্যাঙ্ক' হিসেবে পরিচিত ইসলামি ব্যাঙ্কেও একেবারে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা থেকে জামাত কর্মীরাও উধাও হয়ে যান। হরতাল ভাঙার ডাক দিয়ে বড় বড় মিছিল বার হয় ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায়। 
অন্যান্য শহরগুলির ছবিও মোটামুটি একই ছিল। সকালে জামাত কর্মীরা হামলা চালিয়ে সুবিধা করতে না পেরে দমে যায়। কোথাও কোথাও যানবাহনে আগুন লাগালেও দুপুরের পর থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় তারা। দূরপাল্লার বাসও চলতে শুরু করে। কুমিল্লায় জামাত কর্মীরা হামলা চালালে পুলিশও গুলি চালায়। এক জামাত কর্মী নিহত হন। কক্সবাজারে জামাত কর্মীরা একটি অ্যাম্বুল্যান্সে ভাঙচুর করলে এক রোগী মারা যান। চট্টগ্রাম শহরেও মানুষ রাস্তায় নেমে হরতাল ব্যর্থ করেছেন। একেবারে স্বাভাবিক ছিল বন্দরের কাজকর্ম। 
শাহবাগের চত্বরে এ দিন সকালে জাতীয় পতাকা তুলে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। অন্য দিনের চেয়ে আজ ভিড় ছিল অনেকটাই বেশি। হরতালের ঘোষণা হওয়ায় রাত থেকেই বহু মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন প্রজন্ম চত্বরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়ে। দুপুরে একটি অনুষ্ঠানে সম্মান জানানো হয় কবীর সুমনকে। প্রজন্ম চত্বরের যুববিক্ষোভ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি গান বেঁধে পাঠিয়েছেন তিনি। সুমনের অন্য গানও লাউডস্পিকারে বাজানো হয়। 
সন্ধ্যায় এ দিন জামাতের আক্রমণে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। যুদ্ধাপরাধ আইনে সংশোধনী আনার জন্য ধন্যবাদও জানানো হয় সরকারকে।
http://www.anandabazar.com/19bdesh2.html


উঠবে সীমান্ত-চুক্তিও
তিস্তা নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলবেন খুরশিদ
তিস্তা জট ছাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে খুব শীঘ্রই আলোচনায় বসতে চলেছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তিনি বলেন, "খুব শীঘ্রই আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। শুধু মাত্র তিস্তা বা সীমান্ত চুক্তি নয়, সামগ্রিক ভাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও কথা বলব। আলোচনা হবে অন্যান্য সমস্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইবেন, সে সব ব্যাপারেও আমি কথা বলতে প্রস্তুত।"
সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কথা মনে করিয়ে সলমনকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে কি সেপ্টেম্বরেই তিস্তা চুক্তি সই হবে? ঢাকা থেকে বিশেষ বিমানে দিল্লি ফেরার পথে এক বিশেষসাক্ষাৎকারে সলমন এই প্রতিবেদককে বলেন, "আমাদের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আগাম একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। দু'দেশই চাইছে দ্রুত এই চুক্তিকে বাস্তবায়িত করতে।" তা হলে কি মমতার সম্মতি ছাড়াই তিস্তা চুক্তি করে ফেলা হবে? এই প্রশ্নে সলমনের জবাব, "সম্মতি একটা ছোট শব্দ। আমরা এমন কিছু করব না, যাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। মমতার উদ্বেগকে আমরা সম্মান দিই। এবং আমরা তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি নিয়ে যা করেছি, তার সবটাই তাঁকে জানিয়ে করেছি। তাঁর উদ্বেগের জায়গাগুলিকে আমরা মর্যাদা দিয়ে আলোচনা করে সেগুলির নিষ্পত্তি করতেও আগ্রহী।" সীমান্ত চুক্তি নিয়েও মমতার আপত্তি রয়েছে। এ ব্যাপারে সলমনের জবাব, "কাগজে-কলমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সব দিক খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে আগেই চিঠি দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি যখন সর্বদলীয় বৈঠক করি, তখন মমতা সেই বৈঠকে তাঁর দলের সাংসদদের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা যে ভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন, তাতে আমি সন্তুষ্ট। তৃণমূলের মনোনীত একজন সাংসদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।" তাঁর মন্তব্য, "প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর স্বপ্ন ছিল বিষয়টি নিয়ে বিবাদের নিষ্পত্তি হোক। মমতা নিজেও ইন্দিরার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশ ভাগের পর থেকে সীমান্ত নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, তার নিরসন হলে উনি খুশিই হবেন।"
সীমান্ত চুক্তি নিয়ে অবশ্য ঘোর আপত্তি জানিয়েছে অসম রাজ্য বিজেপিও। এই অবস্থায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিলটিকে কী ভাবে সমর্থন জানাবেন? বিদেশমন্ত্রীর জবাব, "বিজেপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন সীমান্ত বিতর্ক নিরসনের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল। সে সময়ে এই সংক্রান্ত একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করা হয়। তার সুপারিশের ভিত্তিতে সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। ইন্দিরা গাঁধীর স্বপ্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার বাস্তবায়িত করতে সক্রিয় হয়। তখন বিজেপির সেই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছিল কংগ্রেস। আশা করি, এখন বিজেপি কংগ্রেসের উদ্যোগকে সমর্থন জানাবে।" একই সঙ্গে অসম রাজ্য বিজেপির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলতে নারাজ সলমন। তাঁর কথায়, "বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হবেন। এ ব্যাপারে লোকসানের চেয়ে কূটনৈতিক লাভ অনেক বেশি।" 
মমতা ও তাঁর দল কেন্দ্র কথা কংগ্রেস-বিরোধিতার সুর চড়ালেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাই করেছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, "মমতা অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওঁকে দীর্ঘ দিন ধরে চিনি। সিপিএমের মতো সংগঠিত একটি দলকে সরিয়ে বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া সাধারণ ব্যাপার নয়।" তিস্তা-সহ নানা বিষয়ে মমতার যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তা উড়িয়ে সলমন বলেন, "মমতার সম্বন্ধে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে তিনি বাংলাদেশ বিরোধী। কিন্তু উনি আসলে বাংলাদেশের অত্যন্ত ভাল বন্ধু। তিনি তাঁর রাজ্যের, বিশেষত উত্তরবঙ্গের জল সঙ্কটের আশঙ্কায় কিছু বক্তব্য পেশ করেছিলেন। আমি মমতার সমর্থন চাই। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে বোঝাতে পারব যে পশ্চিমবঙ্গের এক চুলও ক্ষতি না করে ওই চুক্তিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যেতে পারে। মমতার সম্মতি একটি ছোট বিষয়। কিন্তু তার সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এগোতে চাই। তাঁকে বাদ দিয়ে নয়।"
এই প্রসঙ্গেই উঠেছে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের প্রসঙ্গও। সলমন বলেন, "নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা চাই না, উগ্রপন্থী শক্তি বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করে ভারতের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করুক। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্য, যার বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সবথেকে বেশি। আমি জানি, মমতা বোঝেন যে, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের জন্যই আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য বাংলাদেশের সাহায্য প্রয়োজন।" প্রয়োজনে মমতার সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে কলকাতাতেও যাবেন বলে জানিয়েছেন খুরশিদ।
http://www.anandabazar.com/19bdesh1.html

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors