Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter
Follow palashbiswaskl on Twitter

Thursday, November 14, 2013

গরিবই গিনিপিগ ট্রপিক্যালে

গরিবই গিনিপিগ ট্রপিক্যালে

Nov 14, 2013, 04.00AM IST

অনির্বাণ ঘোষ

মানুষকে 'গিনিপিগ' বানিয়ে ওষুধ পরীক্ষা নিষিদ্ধ৷ অথচ খাস কলকাতায় একটি সরকারি হাসপাতালে এমনই কাণ্ড রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ৷ গত এক বছরে দেশের শীর্ষ আদালত যেখানে বার বারই নির্দেশ দিয়েছে, আর্থসামাজিক ভাবে অনগ্রসর মানুষদের ব্যবহার করে নতুন ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো যাবে না, সেখানে কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এসটিএম) হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ--বেছে বেছে গরিবগুর্বোদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে 'স্টেম সেল থেরাপি'র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে৷ শুধু তা-ই নয়, এমন একটি পরীক্ষামূলক চিকিত্সার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থার যে সব অনুমতি প্রয়োজন, তারও ধার ধারেনি এসটিএমের রিজেনারেটিভ মেডিসিন অ্যান্ড ট্রান্সেশনাল সায়েন্সেস (আরএমটিএস) বিভাগের চিকিত্সকরা৷

এমনকি, রোগীদের এ কথাও বোঝানো হয়নি যে তাঁদের ওপর একটি নতুন ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে 'চিকিত্সা' চালানো হচ্ছে৷ অল্পশিক্ষিত মানুষগুলোর মানবাধিকারের তোয়াক্কা না-করে তাঁদের থেকে আদায় করে নেওয়া হয়েছে কাগজেকলমে সম্মতি৷ কোনওরকমে সই করতে জানা মানুষগুলো যে আদৌ বোঝেনই না ইংরেজিতে লেখা সম্মতিপত্রের অর্থ, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ রায়দীঘির স্বপন দাস৷ ডান পায়ের আঙুলে ধরা সামান্য একটি পচন (ভাসকুলার গ্যাংগ্রিন) নিয়ে সেপ্টেম্বরের গোড়ায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলেও, যথাযথ চিকিত্সার বদলে যে আদতে তাঁকে 'গিনিপিগ' করা হয়েছে, তা স্বপনবাবুর পরিবার বুঝতে পারে দেড় মাস পরে৷ তত দিনে পচনের শিকার ডান পায়ের গোটা পাতাটাই৷ হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছুটি দিয়ে দেওয়ার পর এখন প্রায় বিনা চিকিত্সায় মরতে বসেছেন তিনি৷

রায়দীঘির কাশীনগরের বাসিন্দা পেশায় ট্রেনের হকার এই ব্যক্তির ঘর বলতে রাস্তার ধারে নয়ানজুলির উপর বাঁধা খড়-মাটির আস্তানা৷ পায়ের পচন আর সংক্রমণ ছড়িয়েছে গোটা শরীরে৷ জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে স্বপনবাবু বলছিলেন, 'তিন মাস আগে ডান পায়ের আঙুলে গ্যাংগ্রিন শুরু হওয়ার পর সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে ভর্তি হয়েছিলাম ট্রপিক্যালে৷ কী চিকিত্সা হত, বলতে পারব না৷ রোজ কোমরের হাড়ের মধ্যে থেকে রস নিয়ে সেটাই ইঞ্জেকশন দিতেন ডাক্তারবাবু৷ মাস খানেক পর পায়ের পাতাটা পুরো পচে গেল৷ লক্ষ্মীপুজোর আগেই ছুটি দিয়ে দিল হাসপাতাল থেকে৷'

রোগী নিজেই জানতেন না, কী চিকিত্সা হত তাঁর৷ তা হলে সম্মতি দিলেন কেন চিকিত্সায়? স্বপনবাবুর স্ত্রী বাসন্তী দেবী বললেন, 'আমরা তো সম্মতি দিইনি৷' তা হলে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে হলফনামা দিয়ে স্বাক্ষর করলেন কেন? স্বামী-স্ত্রী দু'জনে একসঙ্গে বলে উঠলেন, 'ইংরেজিতে কিছু একটা লিখে দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবুরা৷ বলেছিলেন, উকিলকে দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ (এফিডেভিট) করিয়ে নিলে চিকিত্সায় পয়সা লাগবে না৷ আমরা বুঝব কী করে!' তাঁদের আক্ষেপ, পরিস্থিতি যা, তাতে পায়ের কতটা কেটে বাদ দিতে হবে, তা জানা নেই৷ ক্লাস থ্রি-র ছেলে আর মা-বউকে নিয়ে এখন সংসারটা চলবে কী করে?

বাসন্তী দেবী বলছিলেন, হাসপাতালে চিকিত্সা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্রও তাঁদের দেওয়া হয়নি-- প্রেসক্রিপশন, বেড টিকিট, এমনকি ডিসচার্জ সার্টিফিকেট পর্যন্ত নয়৷ ওষুধ লেখাও হত সাধারণ স্লিপে, শুধু রোগীর নাম উল্লেখ করে৷ স্বপনবাবু যে ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত দেড় মাস হাসপাতালের পাইকপাড়া ওয়ার্ড বা জেএনসি ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে ভর্তি ছিলেন, তার কোনও প্রমাণই ছুটির সময়ে হাতে পাননি তাঁরা৷ একমাত্র নথি-- বাড়ির লোকের ইনডোর ওয়ার্ডে ঢোকার অনুমতিপত্র 'ভিজিটর্স পাস', যা ভুলক্রমে রয়ে গিয়েছে বাসন্তী দেবীর কাছে৷ স্বপনবাবু জানাচ্ছেন, তিনি একা নন, ওই ওয়ার্ডে তাঁর মতো আরও অন্তত আট জন রোগীর উপর তাঁরই মতো চিকিত্সা হতে দেখেছেন তিনি৷

অনৈতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অজান্তেই গত ক' বছরে প্রাণ হারিয়েছিলেন ইন্দোরের বেশ কয়েক জন হতভাগ্য৷ তাঁরা জানতেনই না, তাঁদের উপর চলছে ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ৷ এ বছর গোড়ায় তারই পরিপ্রেক্ষিতে গরিব, নিপীড়িত মানুষকে 'গিনিপিগ' বানানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট৷ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর ছাড়পত্র নিয়েও শুরু হয় কড়াকড়ি৷ সোমবারও অন্ধ্রপ্রদেশ ও গুজরাটে চলা দু'টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কড়া সমালোচনা করে দেশের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অধীন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর থেকে৷

এসটিএম কর্তৃপক্ষ অবশ্য কোনও অনুমতিরই তোয়াক্কা করেনি৷ কিন্ত্ত এসটিএমের আরএমটিএস বিভাগে ১৬ জন রোগীর উপর চলছে স্টেম সেল থেরাপি প্রয়োগ করে তাঁদের পোড়া ও পচে যাওয়া অঙ্গের 'চিকিত্সা'৷ অনুমতি ছাড়াই এমন কাজ চলার অভিযোগ পেয়ে জুলাইয়ে তদন্তে নামেন সিডিএসসিও-র চার সদস্যের প্রতিনিধি দল৷ কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল সূত্র বলছে, পরিদর্শনের সময়ে আদৌ সহযোগিতা মেলেনি এসটিএমে৷ কী ভাবে তারা এমন একটি প্রকল্প বিনা অনুমতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন, তা দেখেও অবাক হয়ে যান পরিদর্শকরা৷ এর পরই প্রকল্পটি আশু বন্ধের পক্ষে জোরদার সওয়াল করে দিল্লিতে রিপোর্ট জমা দেন তাঁরা৷ তদন্ত দলের সদস্য ম্যামেন চান্ডি বলেন, 'আমরা তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়ে দিয়েছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে৷' সিডিএসসিও-র এক্সপার্ট কমিটির চেয়ারম্যান রঞ্জিত রায়চৌধুরী বলেন, 'বিনা অনুমতিতে এ ভাবে একটি প্রকল্প চলতে পারে না৷ এ ভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো যায় না৷'

হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, নিয়মিত এই ট্রায়াল চলছে রোগীদের উপর৷ মাঝে দুর্গাপুজোর সময়ে ছ' জন বাদে সকলকে বন্ডে সই করিয়ে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ এখন ফের তাঁদের এক-এক করে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে৷

ব্লাড ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়ার মতো রক্তরোগ ছাড়া অন্য যে কোনও ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য যাদের সম্মতি প্রয়োজন:

রোগী, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এথিকস কমিটি, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর), কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজি (ডিবিটি), সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও)

কর্তৃপক্ষ কী বলছে:

অভিযুক্ত বিভাগের প্রধান চিকিত্সক নিরঞ্জন ভাচার্য বলেন, 'এ ব্যাপারে যা বলার, তা বলবেন প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা৷'

অধিকর্তা নন্দিতা বসু বলেন, 'আগে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলে তার পর স্টেম সেল নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চাওয়া হবে৷' এত দিন তা হলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলল কী করে? এই প্রশ্নের উত্তরে পরস্পরবিরোধী জবাব দিচ্ছেন নন্দিতা দেবী৷ একবার তিনি বলছেন, 'আগে এ সব ট্রায়াল চলছিল৷ অধিকর্তার চেয়ারে আমি বসার পর তা বন্ধ করে দিয়েছি৷' আবার কখনও বলছেন, 'সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের পরিদর্শকরা হাসপাতাল ভিজিটের পর ট্রায়াল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায়, এখন ওদের কথামতোই সব কিছু মেনে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে৷'

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'কেন্দ্র এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে বলেছে, এমন কথা শুনছি বটে, কিন্ত্ত এ নিয়ে কোনও রিপোর্ট পাইনি৷' সিডিএসসিও সূত্রে যদিও জানা যাচ্ছে, তদন্তকারী দলের রিপোর্টের একটি প্রতিলিপি জমা পড়ে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ায়, একটি রাখা হয় সিডিএসসিও-র পূর্বাঞ্চল কার্যালয়ে এবং তৃতীয়টি পেশ করা হয় স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে৷ সুশান্তবাবু বলেন, 'কেন্দ্রের পরামর্শ মতো রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কার্যপদ্ধতি শুধরে নেওয়া হবে শিগগিরই৷' কোনও রিপোর্ট যদি তিনি না-ই পেয়ে থাকেন, তা হলে কেন্দ্রের পরামর্শ তিনি জানলেন কী করে? কোনও সদুত্তর নেই

http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/clinical-tropical/articleshow/25720433.cms


No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors