Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter
Follow palashbiswaskl on Twitter

Thursday, April 16, 2015

বন্ডেড ওয়্যারহাউসের নামে দেশের শিল্প ধ্বংসের চক্রান্তকারী ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক ।

Monsur Haider <haidermonsur@gmail.com> wrote:

প্রভাবশালী সিন্ডিকেট| বন্ডেড ওয়্যারহাউসের নামে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে একদল অসৎ ব্যবসায়ী। এরা ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশ ধ্বংসের এই লুটপাটে লিপ্ত। চক্রটি বন্ড সুবিধায় বিভিন্ন বন্ধ কারখানার নামে অবৈধ আমদানিতে জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এমন একটি চালান আটকও হয়েছে বেনাপোলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনঃরফতানীর শর্তে শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানির সুবিধা পায়। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে কারচুপি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ওইসব প্রতিষ্ঠান কালোবাজারে পণ্য বিক্রি করছে। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
বন্ড লাইসেন্স ইস্যুর সময় ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে কোন্ প্রতিষ্ঠান যোগ্য আর কে অযোগ্য, তাও বিবেচনা করা হয় না। এই লাইসেন্স পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো বড় যে জালিয়াতি বা কারচুপি করে সেটি হলো- অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পণ্য আমদানি করে কালোবাজারে বিক্রি করে। এতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শতভাগ রফতানীমুখী শিল্পে শুল্কমুক্ত সুবিধায় উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানির সুযোগ দেয়া আছে। ওই পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি নিরুৎসাহিত করতে আছে কঠোর নীতিমালা। এ ধরনের পাঁচ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা কাস্টম বন্ড কমিশনারেট। কিন্তু কমিশনারেটের শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত ৭০ শতাংশেরও বেশি প্রতিষ্ঠান বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তা আত্মসাতের সুযোগ নিচ্ছে। কাগজে-কলমে অস্তিত্ব আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই, এমন শত শত প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালা ভঙ্গ করে দেয়া হয়েছে বন্ড লাইসেন্স। নির্দিষ্ট মেশিনারিজের ক্যাপাসিটির অনেক বেশি উৎপাদন দেখিয়ে অস্বাভাবিক হারে আমদানিপ্রাপ্যতা বাড়ানো হচ্ছে, যার ৫০ শতাংশই ভুয়া। আর এ সুযোগে সরকার হারাচ্ছে প্রতিবছর পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব। আর ভুয়া রফতানী দেখিয়ে সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও অথবা মেশিনারিজ স্থাপিত হয়নি কিংবা সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজের উপযোগিতা যাচাই না করেই বন্ড লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। কঠিন শর্তাবলী প্রতিপালনের পর অতি অল্প সময়ে একটি বন্ড প্রতিষ্ঠান অস্তিত্বহীন হওয়ার বিষয়টি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অন্যদিকে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় যেসব পণ্য আসে এর তদারকির দায়িত্ব বন্ড কমিশনারেটের। ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য আলাদা বন্ড কমিশনারেট আছে। তবে দুটি প্রতিষ্ঠানই লোকবল ও সরঞ্জামের অভাবে ধুঁকছে। এর সঙ্গে আছে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ।
বন্ডের আওতায় আমদানিকৃত পণ্য বন্দর থেকে খালাস করে বন্ড কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কারখানায় নেয়া এবং কনটেইনার খুলে কারখানার গুদামে রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন বন্দর থেকে যে বিপুল পরিমাণ বন্ডেড পণ্য আসে, এর ১ শতাংশের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম মানা হয় না। এমনকি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পণ্য গুদামজাত করে সিলগালা করার নিয়মও মানা হয় না। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সে বিষয়ে আদৌ কোনো দায়িত্ব পালন করে না।
এতে করে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানিকৃত পুনঃরফতানীযোগ্য যে পণ্য এখানকার শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের পর আবার রফতানী হওয়ার কথা, সেই পণ্য চলে যাচ্ছে খোলাবাজারে। বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তই হচ্ছে, এই পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু দেশে এরই মধ্যে ৮৩টি রফতানীমুখী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করে তা বিক্রি করে দিচ্ছে খোলাবাজারে। সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রফতানীসংক্রান্ত কার্যক্রম। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি। বন্ডেড ওয়্যারহাউসের নামে আমদানি করা এসব পণ্য থেকে দেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিল্প। জানা গেছে, শুধু একটি প্রতিষ্ঠানই গত মাসের (মার্চ-২০১৫) শেষ সপ্তাহে আমদানি করা ৮১ কোটি টাকার ডুপ্লেক্স বোর্ড ও প্লাস্টিক দানার মধ্যে ৫০ কোটি টাকার পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়ায় সরকার ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। বন্ড সুবিধায় সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় গার্মেন্টসে। এই খাতের বন্ড সুবিধায় আমদানি হচ্ছে আর্ট বোর্ড, হার্ড টিস্যু, ডুপ্লেক্স বোর্ড ও সাদা প্রিন্টিং পেপার। এসব পণ্য গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ উৎপাদনকারী কারখানায় ব্যবহৃত হবে- এমন শর্ত থাকলেও তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে দেশের কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে গেছে। দেশের ৭১টি পেপার মিল স্থানীয় বাজারের ১০ লাখ টনের চাহিদা পূরণ করে বাইরেও রফতানী করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু এই শিল্প আজ কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকারী কাগজশিল্প ধ্বংস করার কাজে উঠেপড়ে লেগেছে কিছু প্রতিষ্ঠান।
দেশের শিল্প ধ্বংসের চক্রান্তকারীদের দেশের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে সর্বোচ্চ সক্রিয় হতে হবে। কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা সৃষ্টিকারী শিল্প বাঁচাতে এবং জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার বিপরীতে সরকারের উদাসীনতা কোনোক্রমেই বরদাশতযোগ্য নয়।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors